ভার্সিটির শুরুর দিকের সেমিস্টার গুলোতে অনেক আজাইরা ফাউন্ডেসন কোর্স করানো হয়। যেমন, পড়তে আসছি কম্পু বিজ্ঞান, হাতে ধরায়া দিল রসায়ন, ক্যালকুলাস, যন্ত্র বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান। প্রথম দিকে বুঝতাম না, যে আসলেই এইগুলা পড়ে কি করব। কই আমাদেরকে শুরু থেকেই নানা ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা শিখাবে না!!!
সিলেবাস ঘেঁটে দেখলাম, পুরো ৪ বছরে সি, জাভা, এসেম্বলি ছাড়া আর কোন ভাষা শিখাবে না। মাঝখানে কি জানি এসকিউএল আছে। তাই ১-১ আর ১-২ ইউনিভার্সিটির সিলেবাস প্রনেতাদের গালাগালি করে পার করলাম। কীসব আজাইরা সাবজেক্ট পড়ায় কামের জিনিশ থুইয়া!!!! পেইন!!!! :(
কিন্তু, ২-১ এ উঠার পরে চোখ কান আস্তে আস্তে খুলতে লাগল। যেই স্বপ্ন নিয়া কম্পু বিজ্ঞান পড়তে আসছি, পাস কইরা ফিরি লাঞ্ছিং দিয়ে বহুত টাকা পয়সা কামাব, তা আস্তে আস্তে ফিকে হতে লাগল। কারন বুঝতে পারছিলাম এতদিন অনেক ক্ষুদ্র স্বপ্ন দেখে এসেছি। জগতটা আরও অনেক বড়। আর বিশেষ ভাবে এই লাইনে যদি ক্যারিয়ার গড়তে চাই, তবে পাড়ি দিতে হবে এখনও বহুদূর!!!
শুরুর দিকের ওইসব আজাইরা সাবজেক্ট কে অভিশাপ দিতে গিয়ে পড়াশোনার প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা চলে এসেছিল। সেই ফাকে কখন যে বিচ্ছিন্ন গনিত আর ইইই কে হেলা ফেলা করে পার করে দিয়েছি টের ও পাই নাই। সম্বিত ফিরল সব কিছুর একেবারে একসাথে। আয় হায়, এখন কি করি???
এখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি, আমাদের যে ওইসব আজাইরা সাবজেক্ট পড়ান হয়েছিল, তা কিন্তু একেবারেই আজাইরা না। কিছু কিছু ইমপ্লিমেন্টেশন তো আমাদের এই শিক্ষা জীবনে আছেই। তার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাও কোন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না, এইখানে জ্ঞানের রাজ্যের বিশালতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় মাত্র। এই যে ক্যালকুলাস কে আমি এত বিরক্তি সহকারে প্রত্যাখান করেছি, সেদিন জানতে পারলাম এক সেমিস্টার পরে অ্যালগোরিদমে গিয়ে ক্যালকুলাসের ভালই প্রয়োগ আছে।
এই যে দুই সেমিস্টার ধরে শুধু ক্লাসের গৎবাঁধা কিছু এসাইন্মেন্ট করে প্রোগ্রামিং কোর্স গুলো পার করে এসেছি, এখন বুঝতে পারলাম, যারা ওই সময়ে নিজের আগ্রহে কোড করত, তারাই ডেটা স্ট্রাকচার ল্যাবে সময়ের মাঝে কোড কমপ্লিট করে ফুল মার্ক পায়।
এইভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুভব করছি যে এতদিন নিজেকে ফাঁকি দিয়ে কি বড় ভুলটাই না করলাম। যদি এইভাবেই ভার্সিটি লাইফ টা পার করে দেই, বা হয়ে যায়, তাহলে খোমাখাতায় চ্যাট করার সুবাদে যে টাইপিং স্পিড হাতে এসেছে, তা দিয়ে কোনরকমে একজন টাইপিস্টের চাকরি বাগায়ে নেয়া যাবে!!!
আরও অনেক কিছু অনুভব করি। আমি এইটা করতে চাই- ওইটা করতে চাই , কিন্তু করার জন্য যে আলস্য ভেঙ্গে কীবোর্ডে হাত চালাব আর মাথা টা একটু খাটাব, সেই দিকে কোন নজর নাই। আমার ইচ্ছা আছে যে আমি উন্নতি করব, কিন্তু সেইজন্যে আমার কোন চেষ্টা নাই!!! এমন অদ্ভুত স্ববিরোধীতা একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব!!!!
আরও একটা রোগ আছে। ভ্রমনে নাকি জ্ঞান বাড়ে। তাই সমানে ইন্টারনেট ব্রাউজ কর। মাসে হাজার টাকা বিল এই দুর্মূল্যের বাজারে। কিন্তু এখন বুঝি, ভ্রমনে জানা হয়, কিন্তু শিখা হয় ওই খাতা কলমেই, ফেসবুক যদি ব্লক করা না থাকে, তবে যতই এটেম্পট নাও, কোন লাভ নাই পিসির সামনে কোড করার আশা নিয়া বসাতে!!!!
কেউ যদি এই লেখা পড়ে থাকেন, এবং আপনার অবস্থাও যদি আমার মত হয়, তাহলে ভাই/বোন, এখনও সময় আছে, আসেন সাবধান হই। নইলে সামনে যে দুর্দিন আসছে, নিজের পায়ে দাঁড়ানো- সংসারের হাল ধরা — সংসার করা!!!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই আলস্যময় ফাঁকিবাজি থেকে উদ্ধার করুন, আমিন!!!!!!!!!!
লিখাটি পূর্বে প্রকাশিত আমার ফেসবুকএ : https://goo.gl/cKIUCb